গ্যাস্ট্রিক কেন হয় ও চিকিৎসার উপায় কি

গ্যাস্ট্রিক: কেন হয় ও চিকিৎসার উপায় কী?

ভাজাপোড়া কিছু খেয়েছেন,পেটে জ্বালাপোড়া হচ্ছে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। সাধারণভাবে আমরা এটা বলে থাকি। গ্যাস্ট্রিকের এই সমস্যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় গ্যাসট্রাইটিস।গ্যাসট্রাইটিস মুলত তখন হয়ে থাকে যখন পেটের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পেটে জ্বালাপোড়া তৈরি হয় তখন।গ্যাসট্রাইটিস খুবই সাধারণ একটি রোগ, বিভিন্ন কারণে এটি হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাসট্রাইটিস খুবই মারাত্তক হয় না এবং চিকিৎসা করালে সেটি খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অনেকে আবার বছরের পর বছর ধরে এই রোগে ভোগে থাকেন এবং কষ্টদায়ক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় তাদেরকে। গ্যাসট্রাইটিসের যদি চিকিৎসা করানো না হয় তাহলে দীর্ঘমেয়াদে গিয়ে এটি আলসারে পরিণত হতে পারে। এটিকে বলা হয় গ্যাসটিকালসার বা স্টমাকালসার। আবার অনেকে এটিকে পেপ্টিকালসার বলে থাকেন, যে নামেই ডাকি না কেনো রোগ কিন্তু একই গ্যাসটিক আলসার এবং পেপটিক আলসার । আজকে আমরা দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সেগুলো হল গ্যাসট্রাইটিস, পেপটিক আলসার।

গ্যাসট্রাইটিস কি?
গ্যাসট্রাইটিস সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে। এ ব্যাকটেরিয়ার নাম হ্যালিকবেকটার পাইলরি। এছাড়াও আরো নানা কারণ রয়েছে যার জন্য গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা হতে পারে এর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের ব্যবহার , দীর্ঘদিন ধরে ব্যাথানাশক ওষুধ সেবন, সার্জারি অনেক দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এসব ক্ষেত্রে এবং অনেক সময় আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে আমাদের শরীরের কুষকে আক্রান্ত করে ফেলে। এসব ক্ষেত্রে গ্যাসট্রাইটিস হতে পারে।

গ্যাসট্রাইটিসের উপসর্গ কি?
*বদহজম ,
*পেটে ব্যথা,
*অসুস্থবোধ করা এবং অসুস্থ হওয়া,
*খাওয়ার পর অসুস্থতা অনুভব করা।
এটাই আসলে গ্যাসট্রাইটিসের লক্ষণ বা উপসর্গ। এতক্ষণ ধরে যেসব লক্ষণ বা উপসর্গের কথা বললাম এগুলা একসাথে হয়ে সেরেও যেতে পারে। বদহজম এবং পেটে ব্যথা যদি একসাথে দেখা দেয় তাহলে পরিমিত খাবার খেয়ে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এ ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আপনার বদহজম এবং পেটে ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে এবং আপনার যদি পায়খানার সাথে রক্ত দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গ্যাসট্রাইটিস নিয়ন্ত্রনে কি করণীয়?

আপনার যদি মনে হয় ওষুধ বেশি সেবনের ফলে আপনার গ্যাসট্রাইটিস হচ্ছে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি ওষুধ পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়াও জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন এনে দেখা যেতে পারে গ্যাসট্রাইটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে কিনা। এরমধ্যে রয়েছে খাবার অল্পপরিমাণে বারবার খেতে হবে,পেটের জন্য যন্ত্রণা তৈরি করে এমন খাবার অর্থাৎ বেশি মসলাজুক্ত খাবার বা ভাজাজুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালকোহল পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে অথবা মাত্রা কমিয়ে ফেলতে হবে। যদি কোনোধরনের মানষিক চাপ থেকে থাকে তা অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে।

পেপটিক আলসার কি?

পরিহার করতে হবে ধুমপান

অ্যালকোহল পাণীয় দ্রব্য

এর আগে যখন বলেছিলাম যে গ্যাসট্রাইটিস এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়। আর সে ব্যাকটেরিয়ার নাম হল হ্যালিকপেকটার পাইলরি । গ্যাসটিক আলসারের জন্য টিক একই ব্যাকটেরিয়া কাজ করে থাকে। এ ব্যাকটেরিয়া যেটি করে সেটি হচ্ছে খাবার হজমের জন্য আমাদের পাকস্থলীতে যে এসিড তৈরি হয়, সে এসিডের বিরুদ্ধে আমাদের যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে সেটি ভেঙে দেয়। ফলে এই এসিড পেটের পাকস্থলীতে লাইলিংয়ে গিয়ে ক্ষত তৈরি করে এবং এর ফলশ্রুতিতে আলসার দেখা দেয়। এটিই পেপটিক আলসার। শুধু আপনি বা আমি নই সব বয়সের মানুষ এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া মারাত্তক পরিণতি বয়ে আনতে পারে । তবে শুধু ব্যাকটেরিয়াকে দুষ দিয়ে লাভ নেই আপনি এবং আমি যে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত সেটিও পেপটিক আলসার তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

পরিহার করতে হবে ধুমপান

যেমন : মশলাযুক্ত খাবার এর কথা ধরুন না, এ ধরনের খাবার খেতে অনেক সুস্বাদু হলেও এটি কিন্তু আসলে পরোক্ষভাবে পেপটিক আলসার তৈরি করে। এছাড়াও মানষিক চাপ ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণও পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অবশ্য এগুলোর পক্ষে তেমন সত্যতা এবং কোন প্রমাণ নেই। তবে এটা সত্য যে ধরনের বৈশিষ্ট্য পেপটিক আলসারকে আরো খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ধুমপান, ধুমপান পেপটিক আলসারকে আরো খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যায় এবং সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হল ধুমপান করলে পেপটিক আলসারের যে চিকিৎসা আছে সেটিও অনেক সময় কাজ করে না।

পেপটিক আলসারের চিকিৎসা কি ?

পেপটিক আলসার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কডনি

আপনার যদি পেপটিক আলসার থেকে থাকে তাহলে এর চিকিৎসা হবে যে কি কারণে আপনি পেপটিক আলসারের শিকার হয়েছেন তার উপর। তবে আশার কথা হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেপটিক আলসারের চিকিৎসা করানোর পর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে আলসারটি যদি হ্যালিকবেকটার পাইলরি ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য একাধিক কারণে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে গ্যাস্ট্রিকের নানা সমস্যা যেহেতু আমাদের জীবনযাপন এবং ধুমপানসহ নানা ধরনের অভ্যাসের উপর অনেকটাই নির্ভর করে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা গেলে গ্যাস্ট্রিকের নানা সমস্যাকেও এড়িয়ে চলা । সেই সাথে স্বাস্থ্যকর এবং পরিমিত খাবার গ্রহণ করা গেলে এটিকে অনেকাংশেই নির্মূল করা যায়।
তাই সবশেষে বলা যায়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ

পোষ্টটি পড়ার জন্য।

আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন,

UpWeberBD এর সাথেই থাকুন।

ধন্যবাদ।

Leave a Comment